Transparent Logo
<
Scroll down

boi

বইবাজার
সপ্তম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা

বই লেখা ও ছাপার পরে প্রয়োজন তা বাজারজাত করার। সব বই অবশ্য বিক্রির জন্য নয়—বেশ কিছু বই প্রচারের উদ্দেশ্যে মুদ্রণের প্রথম যুগ থেকে ছাপা হয়ে আসছে। অন্য ভাষার বইবাজারের মতো বাংলা বইবাজারে মূল বাণিজ্যিক গুরুত্ব স্কুল-কলেজ পাঠ্য ও তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বইয়ের। কিন্তু পাশাপাশি আমরা অবহেলা করতে পারি না অন্যান্য বই ও তার বাজারকে। আঠেরো শতকে গড়ে ওঠা ইংরিজি বইয়ের বাজার থেকে কী করে বাংলা বইয়ের বাজার গড়ে উঠল সেকথা রয়েছে এ সংখ্যায়। ...

কী আছে ভিতরে

বই আমাদের মননের সঙ্গী। মুদ্রণযন্ত্র, হরফ এবং ছাপার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী আবিষ্কার হওয়ার আগে ছিল হাতে-লেখা পুথি। সাধ থাকলেও সবার তা কেনার সামর্থ্য ছিল না। তাই পুথিপাঠের আসরে হাজির হতেন রসগ্রাহী অনেক শ্রোতাই। মগ্ন হয়ে থাকতেন পুথির রসসুধায়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এর ব্যতিক্রম নয়। ১৭৭৮-এ বিচল হরফে প্রথম বাংলা বইছাপার আগে গাঁ-ঘরে চল ছিল পুথি লেখার ও পাঠের। মূল পুথিটি আবার হাতে লিখে নকল করাও হত এবং সে নকল বিক্রি হত আগ্রহীজনের কাছে। এমন হাতে-লেখা বই বা পুথি এখনও সযত্নে রাখা আছে অনেক সাধারণ বা ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায়। সেগুলি মূলত সাহিত্যরসের আধারে সমাজের দলিল। অন্যদিকে গুরুমুখী শিশুশিক্ষা ছিল টোল-পাঠশালাকেন্দ্রিক—সেখানে গুরুমশাই হেঁকে হেঁকে পড়াতেন আর শিক্ষার্থীরা শুনে শুনে শিখত। পুথির যুগ শেষ হয়ে ছাপা বইয়ের কালে প্রয়োজন হল মূলধনের—কারণ মুদ্রণযন্ত্র, হরফ, কাগজ, ব্লক কিনতে হবে, দিতে হবে কর্মীদের বেতন। তাই ছাপা বইয়ের ঠিক করা হল একটি নির্দিষ্ট বিনিময়মূল্য যা ছাপার খরচ তুলতে সাহায্য করবে, আবার কিছু লাভের মুখও দেখবে প্রকাশক। আবার এই বিকিকিনির একটা নির্দিষ্ট জায়গা হলে ক্রেতার সুবিধা—সহজেই খুঁজে নিতে পারবে বিক্রেতাকে। কিন্তু সব কিছুই সহসা একদিনে সম্ভব নয়। ধীরে পাঠকের চাহিদাই তৈরি করে নেয় সে ব্যবস্থা। বাংলা বই ছাপার পরও পাঠকের চাহিদায় প্রকাশকের গরজে তৈরি হয়েছিল ছাপা বইয়ের বাজার। তবে সব বই বিক্রি করার জন্য ছাপা হয়নি। সবাই আর্থিক লাভের আশায় বইও ছাপেননি। এদেশে সবার আগে মুদ্রণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন যে ইয়োরোপিয়ান মিশনারিরা তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় প্রচারের জন্য বই দেশীয় মানুষকে দেশীয় ভাষায় ছেপে বিলি করা। আর এ দেশে বাণিজ্য করতে এসে শাসনের যন্ত্র হাতে তুলে নেওয়া কোম্পানি কর্তাদের লক্ষ্য ছিল বই ছেপে বিলেত থেকে আসা কর্মচারীদের দেশীয় ভাষার ব্যাকরণ শেখানো, শব্দার্থ সড়গড় করা—যাতে তাঁরা এ দেশের জনগণের সঙ্গে ভাব আদান-প্রদান করতে পারেন। কিন্তু শাসনকাজ চালানো তো শুধু বিলেতি কর্মচারী নির্ভর হতে পারে না, তাই দেশি মানুষদের ইংরেজি শিক্ষায় দোরস্ত করতে চালু হল স্কুল, ছাপা হল সেই স্কুলে পড়া ও পড়ানোর জন্য বই। এই স্কুলপাঠ্য বই ছাপা ও বেচাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠল বাজার। বাজার দুই অর্থেই—বিকিকিনির জায়গা এবং অর্থকরী ব্যাবসার সূত্র। প্রথম বাঙালি হিসাবে বাংলা বই ছেপে দোকান খুলে বসার কৃতিত্ব সম্ভবত গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের। তবে বাংলা বই লেখা-ছাপা-বিক্রি—তিনক্ষেত্রেই চূড়ান্ত সফল হন স্বয়ং বিদ্যাসাগর মশাই। তাঁর স্কুলপাঠ্যবই কার্যকরীভাবে ও বাণিজ্যিক দিক দিয়ে বাজারসফল। আর বাজারসফল নাহলে কোনো প্রকাশকই কোনো লেখকের বই ছাপতে চাইতেন না। তাই ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কালীপ্রসন্ন সিংহ, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, বঙ্কিচন্দ্র প্রমুখ ‌অনেক সাহিত্যিস্রষ্টাই প্রথমজীবনে নিজেদের লেখা নিজেরাই ছাপতে উদ্যোগী হন। রবীন্দ্রনাথের প্রথম বই কবি-কাহিনী প্রকাশ করেছিলেন কবিবন্ধু প্রবোধচন্দ্র ঘোষ। বর্তমান সময়েও চিত্র খুব একটা বদলায়নি। বইবাজারের চালিকাশক্তি আজও স্কুল-কলেজের পাঠ্য ও তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বই। তবে গল্প-উপন্যাস-কবিতা-প্রবন্ধ-ভ্রমণকাহিনি ও অন্যান্য আরো বিভিন্ন ধরনের বইও ছাপা হয়। ছাপা হয় অসংখ্য সাময়িকপত্র। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে চাহিদা ‌অনুযায়ী ছাপার প্রযুক্তি আসার পর পরীক্ষামূলকভাবে ছেপে বইটির বাজার পরখ করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ‌অন্যদিকে এর ফলে সুযোগ তৈরি হয়েছে কম মূলধনে বইব্যবসায়ে নেমে পড়ার। উপায় রয়েছে স্থায়ী দোকান না-চালু করে ‌অনলাইনে ব্যাবসা চালানোর। এছাড়াও যোগ দেওয়া যায় বছরের বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার সদরে ও মফস‍্সলে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন বইমেলার বৃহত্তর বইবাজারে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আমাদের বর্তমান সংখ্যায় তুলে ধরা হয়েছে বাংলা বইবাজারের শুরু থেকে বর্তমান সময়কাল অবধি বিবর্তনের এক খণ্ড চিত্র। ধরা পড়ছে এ বিরাট বাজারের খুবই সামান্য অংশ। আশু প্রয়োজন বাংলা বইবাজারের এক পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনার। নিদেনপক্ষে চালু করা উচিত প্রতি বছর প্রকাশিত সব ধরনের বইয়েরর তালিকা বানানোর, নইলে অচিরেই হারিয়ে যাবে বাংলা বুক-হিস্ট্রির এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

প্রকাশকাল: জুন ২০২৪
প্রচ্ছদ ও শিল্প-নির্দেশনা: সোমনাথ ঘোষ
সম্পাদক: সৈকত মুখার্জি

বিষয়সূচি

মুদ্রণ পূর্ববর্তী অমুদ্রিত বইয়ের বাজার
• শুভাশিষ গায়েন
১৮ শতকের কলকাতা বিদেশি বইয়ের বাজার
• প্রজিতবিহারী মুখোপাধ্যায়
সরকারি প্রকাশনার দুই শতক
• উৎপল চক্রবর্তী
ভ্রাম্যমাণ বইপাড়া
• দেবাশিস বসু
ভারতীয় বই বাজারে বাংলা পঞ্জিকা: একটি পরিক্রমা
• নিলয়কুমার সাহা
... বাংলা বইয়ের প্রথম পর্ব: প্রকাশন ও বিপণন
• সুরঞ্জন মিদ্দে
‘মুসলমানী’ বাংলা বই : পাঠকপ্রিয়তা ও বিপণন
• সাইফুল্লা
লেখাপড়ার ইঁদুরদৌড় ও মানেবই-সংস্কৃতি
• অঙ্কন ঘোড়ই
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা: ১৮৫৭-১৯০৯
• প্রবীর মুখোপাধ্যায়
গ্রন্থপ্রেমীর মায়াকানন: কলেজ স্ট্রিট পুরোনো বইবাজার
• আত্মজিৎ মুখোপাধ্যায়
ব্যাপারী যখন দেবরাজ
• অরিন্দম দাশগুপ্ত
দক্ষিণে যাও চলে
• অমিতাভ সেনগুপ্ত
মেটিরিয়া মেডিকা-কাব্য থেকে ধরণীর ধুলোয়
• ভাস্কর দাস
আদালতের বই
• প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত
টুকরো কথা: সিন্ধুবারোয়াঁয় লাগে তান
• সুমন ভট্টাচার্য
প্রসঙ্গ: কলকাতা বইমেলা
• দেবজ্যোতি দত্ত
বেচা বেচা শুধু, তোমার মন নাই মার্কেট?
• ফাল্গুনি ঘোষ
উত্তর-পূর্বের বইবাজার: কেন্দ্র, পরিধি এবং আমরা
• মৃন্ময় রায়
শিলংয়ের চপলা বুক স্টল: প্রকাশক ও বিক্রেতা
• নবকুমার দুয়ারী
ভালো বই, খারাপ বই: কিছু যুক্তি, তর্ক আর ভালোবাসা
• প্রবীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বাংলা সৃজনশীল বই-ব্যাবসার অন্দরমহল
• মারুফ হোসেন
কল্পবিজ্ঞান প্রকাশনা ও বিপণনের হাল-হকিকত
• দীপ ঘোষ
বাংলা বইবাজার
• শুভঙ্কর দে
বাতিঘর
• হরপ্পা প্রতিবেদন
যৌনতা, পর্নোগ্রাফি, বই: কামনা বাসনার অসংগঠিত বাজার
• বিজলিরাজ পাত্র
বাংলা বইবাজার: একটি পর্যবেক্ষণ
• সৈকত মুখার্জি


 

গ্রাহক হোন
হরপ্পার গ্রাহক হতে গেলে দুটি সংখ্যার জন্য মোট আটশো টাকা দিতে হয়। (অতিরিক্ত ডাকমাশুল লাগবে না)
যোগাযোগ করুন ই-মেলে অথবা ফোনে কথা বলুন।

সরাসরি প্রাপ্তিস্থান
• হরপ্পার পরিবেশক পশ্চিমবঙ্গে অক্ষর প্রকাশনী, ১৮এ টেমার লেন, কলকাতা-৯ ও বাংলাদেশে বাতিঘর।
• কলেজস্ট্রিটে পাতিরাম, ধ্যানবিন্দু, দেজ, দে বুকস্টোর, উল্টোডাঙায় সুনীলদার দোকান, রাসবিহারী মোড়ে কল্যাণদার দোকান, রিড বেঙ্গলি বুক স্টোর, শান্তিনিকেতনে রামকৃষ্ণর দোকানের মতো বহু স্টলে হরপ্পা নিয়মিত পাওয়া যায়। এছাড়া অনলাইনে হরপ্পা বিক্রি হয়।
• পত্রিকা পেতে আপনি দপ্তরেও মেল করতে পারেন।

বৈদ্যুতিন পুস্তিকা
করোনার আক্রমণে অন্তরীণ অবস্থায় ১ বৈশাখ ১৪২৭ থেকে ‘হরপ্পা’-র বৈদ্যুতিন পুস্তিকা প্রকাশের সূচনা। এই পুস্তিকা নিজেদের ওয়েবসাইট, সামাজিক মাধ্যম, যেমন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে পাঠকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। দেখবেন চলুন...