অষ্টম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা অলংকৃত যে-কোনো জিনিসের প্রতি আমাদের আকর্ষণ চিরকালের। বাংলা বই লেখা ও ছাপার প্রায় শুরুর দিক থেকেই তাকে চিত্রিত করে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা চলেছে নানাভাবে। পাঠককে আকর্ষণ করা ও প্রতীকীভাবে পাঠ্যের হালহদিশ পৌঁছে দেওয়া বইয়ের ভিতর আঁকা ছবিগুলির লক্ষ্য। কাঠ বা ধাতু খোদাই করে গ্রন্থচিত্রণের যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান অফসেট প্রযুক্তির কাল পর্যন্ত বাংলা গ্রন্থমুদ্রণের সেই নান্দনিক ধারার ঐতিহ্য ও বিবর্তন এ সংখ্যার বিষয়বস্তু। ...
মানব সভ্যতার শুরুতে ভাব আদানপ্রদানের মাধ্যম ছিল মৌখিক। পরবর্তীকালে প্রয়োজন হল মৌখিক মাধ্যমের পাশাপাশি অন্য কোনোভাবে বক্তব্যকে ধরে রাখার বা সে বক্তব্যকে অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়ার। সে উদ্দেশ্যে ব্যবহার শুরু হল প্রতীকী কোনো চিহ্নের দ্বারা মনের ভাব অন্যের কাছে তুলে ধরার। কিন্তু সেসময় ভাবপ্রকাশের নির্দিষ্ট সর্বজনগ্রাহ্য কোনো প্রতীক ছিল না। যা বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে প্রাথমিকভাবে সেটির অবয়বের কাছাকাছি কোনো ছবি হয়তো আঁকা হত। বস্তু-ব্যক্তি বা অন্যান্য পার্থিব উপাদান—যা চোখে দেখা যায়—তাকে চেষ্টা করলে আঁকাও হয়তো যায়; কিন্তু বিমূর্ত কিছুকে সেভাবে বোঝানো ছিল দুষ্কর। এছাড়াও যা আঁকা হচ্ছে তা যে দেখছে তার কাছে সে ছবি কতটা বোধগম্য, সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। দ্রষ্টা বুঝুক বা না-বুঝুক আমরা নিশ্চিত সেই আঁক-কাটা ছবি বা চিহ্নের মূল কাজ ছিল কোনো বার্তা বা মেসেজ বহন করা। প্রাথমিক এই সূত্র ধরেই বলা যায়, ছবি মাত্রই কোনো না কোনো বার্তা বহন করে। কাকে ছবি বলব বা বলব না, সেটা ব্যক্তিগত বোধ এবং পছন্দের বিষয়—বিতর্কের নয়।
শুরুর দিন থেকে ছবির এই প্রয়োজনীয়তা ব্যবহারের তারতম্যে আরো ব্যাপক হয়েছে নানা ক্ষেত্রে নানাভাবে। শুধু মূর্তকে ফুটিয়ে তোলা বা বিমূর্তকে রূপ দেওয়ার আধার হিসাবে কাজে লাগানো নয়, প্রয়োগ করা হয়েছে আলংকারিকভাবে আকর্ষণের জন্য। ছবিকে গ্রন্থ-অলংকরণে ব্যবহারের কারণটাও তাই। প্রাথমিকভাবে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ। এছাড়াও টানা টেক্সট পড়ে যাওয়ার একঘেয়েমি কাটাতে ছবি গ্রন্থবিন্যাসে ব্যবহার হতে থাকল। পুথির লিপিকররা চিত্রিত পুথি তৈরি করতেন—সৌকর্য-সৌন্দর্য বাড়ত। পুথির পাটায়ও থাকত ছবি। তারপর আসে ছাপাখানার যুগ। বাংলা ছাপা শুরুর আগে কলকাতায় ইংরাজি ছাপার প্রচলন হয়। গবেষক গ্রাহাম শ নথি ঘেঁটে দেখেছেন ১৭৮৫-তে মিস এমিলি ব্রিটিল-এর দি ইন্ডিয়া গাইড; অর জার্নাল অভ এ ভয়েজ, টু দি ইস্ট ইন্ডিজ...-এ কেপ টাউন ও টেবল মাউন্টেন-এর ধাতুখোদাই ছবি ছাপা হয়েছিল। (“NB the copy seen has only the one engraving of Capetown and Table Mountain”। Printing in Calcutta to 1800, p 90)। ওই বছর ড্যানিয়েল স্টুয়ার্ট ছাপেন ৫৪ পাতার কোনো এক নাম না-জানা কবির কবিতার বই The Bevy of Calcutta Beauties —যেটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে সুচতুর খোদাইকার মুখপাতে আঁকা কিউপিডের দৃশ্যের পশ্চাৎপটে রেখেছিলেন পাঠকদের চেনা বাস্তবচিত্র—তাঁদের তৎকালীন বাসভূমি কলকাতা, এসপ্ল্যানেড—বয়ে যাওয়া হুগলি নদীতে ভাসমান জাহাজের পাল। আর অপার রহস্য ছিল নামের প্রথম ও শেষ অক্ষরের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা সুন্দরীদের পরিচয়ে—“Only the first and the last letters of the names of the beauties have been printed [...]”।
একই ধারা অনুসরণে প্রথম ছাপা বাংলা সচিত্র বই অন্নদামঙ্গল-এ (১৮১৬) প্রকাশক গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য ‘পুস্তকের প্রতি উপক্ষণে এক ২ প্রতিমূর্ত্তি থাকিবেক […]’ ঘোষণা করে ছেপেছিলেন ছ’টি ছবি—যার দু’টি রামচাঁদ রায়ের স্বাক্ষরিত। বইটির বাণিজ্যিক সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে ছবি ছাপা হতে থাকে বাংলা বই ও পত্রিকায়। যত দিন যায় বাড়ে ছবির সংখ্যা, পালটায় প্রযুক্তি। প্রযুক্তির বদলের জন্য মুদ্রণের মানের বিকাশ ও চালু প্রযুক্তিতে খরচ কম—এই যুক্তিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। বর্তমানে বহু বদলের পর শুরুর কাঠখোদাই প্রযুক্তির জায়গা নিয়েছে ডিজিটাল কম্পিউটরনির্ভর কৌশল।
সেই শুরুর দিন থেকে বাংলা বইয়ের ভিতরে ছাপা ছবি বা অলংকরণ কিন্তু শিল্পীদের উপর নির্ভরশীল। (কোনো খোদাইশিল্পী কোনো চিত্রশিল্পীর ছবি দেখে খোদাই করলেও খোদাইকারের শিল্পদক্ষতাকে অস্বীকার করা উচিত নয়।) উনিশ শতকের রামচাঁদ রায় থেকে শুরু করে বিশ শতকের উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায়, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, নন্দলাল বসু, বিনয় বসু, যতীন্দ্রকুমার সেন, শৈল চক্রবর্তী, কাফি খাঁ, সত্যজিৎ রায়, পূর্ণেন্দু পত্রী, খালেদ চৌধুরী কিংবা বর্তমান সময়ের হিরণ মিত্র, প্রণবেশ মাইতি, অজয় গুপ্ত, সুব্রত চৌধুরী, দেবব্রত ঘোষ, দেবাশীষ দেব, কৃষ্ণেন্দু চাকী, অনুপ রায়, নির্মলেন্দু মণ্ডল প্রমুখ বরেণ্য শিল্পী আমাদের গ্রন্থচিত্রণে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য মনে রাখার মতো ছবি—যা নিসন্দেহে আমাদের পড়ার আগ্রহ বাড়িয়েছে। কিন্তু এরই ফাঁকে আমরা বিস্মৃত হয়েছি বহু কুশলী অলংকরণ শিল্পীর নাম। আমাদের বর্তমান সংখ্যা তেমনই কিছু নমুনা তুলে ধরার সামান্য প্রয়াস। এই সংখ্যায় শিল্প-অনুরাগীদের পাশাপাশি অলংকরণ শিল্পীরা সরাসরি কলম ধরেছেন তাঁদের অভিজ্ঞতা পাঠকের সঙ্গে ভাগ করে নিতে।
প্রকাশকাল: অক্টোবর ২০২৪
প্রচ্ছদ ও শিল্প-নির্দেশনা: সোমনাথ ঘোষ
সম্পাদক: সৈকত মুখার্জি
মুঘল পুথির অলংকরণ
• অশোককুমার দাস
কলকাতায় ছাপা বই: সচিত্রীকরণের আদিপর্ব
• ইন্দ্রজিৎ চৌধুরী
মুদ্রণপ্রযুক্তি, মাধ্যম ও বাংলা অলংকরণের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
• অরণ্য সেনগুপ্ত
উনিশ শতকের গ্রন্থ অলংকরণ
• অসিত পাল
কমলিনী সাহিত্য মন্দির: ছাপা ছবি-র নতুন বাজার
• বিজলীরাজ পাত্র
বাংলা সাময়িকী: চিত্রগতি-চিত্রমতি
• সুমন ভট্টাচার্য
শতবর্ষ পার করা ‘সন্দেশ’-এর অলংকরণ
• দেবাশিস সেন
... জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির শিল্পীদের ইলাস্ট্রেশন
• সুশোভন অধিকারী
বিশ্বভারতীর বই ও কয়েকটি সাময়িকপত্র
• সত্যশ্রী উকিল
গ্রন্থের অলংকরণে শিল্পী অসিতকুমার হালদার
• গৌতম হালদার
অলংকরণে শিবরাম
• দেবাশীষ দেব
বাংলা সাহিত্যে কৌতুকালংকরণ: ছবির মজা অথবা মজার ছবি
• দেবাশিস গুপ্ত
অন্ধবনের গন্ধ-গোকুল
• সন্দীপ দাশগুপ্ত
সত্যজিৎ রায়ের অলংকরণ ভাবনা (সন্দীপ রায়ের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকার)
• প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত
অঙ্গসজ্জার পূর্ণেন্দু
• পুণ্যব্রত পত্রী
রেখাচিত্রে গড়া এক আশ্চর্য পৃথিবী
• কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্ত
গ্রন্থচিত্রণে কে জি সুব্রহ্ম্যণন: স্বরচিত ও স্বচিত্রিত বই
• সৌমিক নন্দী মজুমদার
অন্যরকম ইলাস্ট্রেশন প্রসঙ্গে দু’-চার কথা
• দেবরাজ গোস্বামী
অলংকরণ প্রসঙ্গে
• প্রণবেশ মাইতি
এক ভিন্ন সংঘাতের গল্প
• হিরণ মিত্র
একটু অন্য কিছু লাগে
• দেবব্রত ঘোষ
অলংকরণ শিল্পীদের সঙ্গে
• নির্মলেন্দু মণ্ডল
অথ অলংকরণ কথা
• সৌমিত্র কর
কল্পকথার ত্রয়ী রূপকার: ছোটোদের প্রিয় তিন শিল্পী
• স্যমন্তক চট্টোপাধ্যায়
কল্পচিত্র: কল্পবিজ্ঞানের অলংকরণ
• উজ্জ্বল ঘোষ
আমার অলংকরণ শুরুর গল্প
• পৌলমী গুহ
আমার দেখা শিল্পীরা ও তাঁদের অলংকরণ
• সোমনাথ ঘোষ
গ্রাহক হোন
হরপ্পার গ্রাহক হতে গেলে দুটি সংখ্যার জন্য মোট আটশো টাকা দিতে হয়। (অতিরিক্ত ডাকমাশুল লাগবে না)
যোগাযোগ করুন ই-মেলে অথবা ফোনে কথা বলুন।
সরাসরি প্রাপ্তিস্থান
• হরপ্পার পরিবেশক পশ্চিমবঙ্গে অক্ষর প্রকাশনী, ১৮এ টেমার লেন, কলকাতা-৯ ও বাংলাদেশে বাতিঘর।
• কলেজস্ট্রিটে পাতিরাম, ধ্যানবিন্দু, দেজ, দে বুকস্টোর, উল্টোডাঙায় সুনীলদার দোকান, রাসবিহারী মোড়ে কল্যাণদার দোকান, রিড বেঙ্গলি বুক স্টোর, শান্তিনিকেতনে রামকৃষ্ণর দোকানের মতো বহু স্টলে হরপ্পা নিয়মিত পাওয়া যায়। এছাড়া অনলাইনে হরপ্পা বিক্রি হয়।
• পত্রিকা পেতে আপনি দপ্তরেও মেল করতে পারেন।
বৈদ্যুতিন পুস্তিকা
করোনার আক্রমণে অন্তরীণ অবস্থায় ১ বৈশাখ ১৪২৭ থেকে ‘হরপ্পা’-র বৈদ্যুতিন পুস্তিকা প্রকাশের সূচনা। এই পুস্তিকা নিজেদের ওয়েবসাইট, সামাজিক মাধ্যম, যেমন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে পাঠকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। দেখবেন চলুন...