চতুর্থ বর্ষ, প্রথম সংখ্যা
২০২০-তে শরৎকাল আসতেই ঢাকে কাঠি ঠিক সেভাবে পড়েনি। করোনাকালে মুখোশ-পরা, শারীরিক দূরত্ববিধি বজায় রাখা, মণ্ডপে জমায়েতে সংক্রমণের ভয় ইত্যাদি নানা কিছু নিয়ে দোলাচলে ছিল শারদোৎসবের জাঁকজমক। তাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল পুজোনির্ভর জীবিকা যাঁদের তাঁদের ভবিষ্যতও। পুজোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত সেইসব মানুষদের বর্তমান অবস্থা এবং সাধারণের স্মৃতিচারণের মিশেলে হরপ্পা-র নিবেদন দুর্গতিনাশিনী।...
এবছরের শুরুতে কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি মার্চের শেষে গোটা দেশ স্তব্ধ হয়ে যাবে, ঘুরবে না রেলের চাকা, উড়বে না উড়োজাহাজ, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে স্কুল-কলেজ-অফিস-আদালত-কলকারখানা-সিনেমাহল-জলসা-জমায়েত-খেলাধুলা, রাস্তায় বেরোলে মুখে বাঁধতে হবে মুখোশ। কর্মসূত্রে রাজ্যের বাইরে-থাকা মানুষেরা রুজিরুটি বন্ধ হওয়ায় নিরাপত্তার তাগিদে ফিরে আসতে থাকে নিজেদের ভিটেতে। পথে বাস-ট্রেনের তলায় পড়ে মরেও যায় ক্লান্তিতে ডুবে-থাকা অনেকেই। আবার অনেকেই তাদের কল্পিত নিরাপদ আশ্রয়ে এসে আপদে পরিণত হবে, তাই পুনঃমুষিক ভব—এ সূত্র মেনে ফিরে যাবে কর্মসংস্থানের ইঁদুর দৌড়ে। তাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না, যেমন ছিল না মোমবাতি-জ্বালানো, থালা-বাজানো নাগরিকদের, যাঁরা নির্দেশমেনে নির্দিষ্ট সময়ে কর্তব্যসম্পাদন করলেও কমেনি করোনা দাপট, দিন-দিন তা অঙ্কের নিরিখে বেড়েই চলেছে। আর এই ফাঁকে গ্রীষ্ম-বর্ষা বিদায় নিয়ে চলে এসেছে শরৎ। শিউলি ফুটেছে, হিম-হিম সকালে ঘাসের আগায় শিশির চকচক করছে, নদীর ধারে কাশবনে দোলা লেগেছে। পঞ্চ ইন্দ্রিয় টের পেয়ে গেছে মা আসছেন।
কিন্তু সবাই আজ সন্দিহান এমন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে, সংক্রমণের ঘনঘটার মধ্যে পুজো করা কি উচিত হবে। দ্বিধা দূর করতে স্মরণ করি মহামান্য হুতোম বাহাদুরের সেই উক্তিটি: “বার জন একত্র হয়ে কালী বা অন্য দেবতার পূজা করার প্রথা মড়ক হতেই সৃষ্টি হয়—"। কিছুদিন আগেও দেখেছি পাড়ায় কোনো অঘটন ঘটলে মাতব্বর গোছের কিছু লোক রক্ষেকালী পুজো করতেন। অবশ্যই বারোয়ারি—দোরে-দোরে চাঁদা তুলে। তবে ওই পুজোর আয়োজন থালা বাজিয়ে বা প্রদীপ জ্বালিয়ে রোগ তাড়ানোর কোনো দৈবসূত্র নয়। যেমন দুর্গাপুজো আপামর বাঙালির কাছে যতটা-না ধর্মীয় অনুষ্ঠান তার থেকে অনেক বেশি উৎসব। পুজো শব্দটা সঙ্গে বাঁধা থাকলেও সেখানে সাম্প্রদায়িক বাড়াবাড়িটা কম। পুজোয় যেমন সকলেই সামর্থ্য অনুযায়ী চাঁদা দেন, তেমনি অংশও নেন মন খুলে।
আবার উৎসব আমআদমির কাছে একটা যজ্ঞও বটে। মন্ত্রতন্ত্র কতটা তা-তে আছে না-জানলেও বলতে পারি এ যজ্ঞ জঠরের যজ্ঞ। এই পুজোর দিকে তাকিয়ে বছরভর বসে থাকে বহু মানুষ। সারা বছর টুকিটাকি রোজগারের উপায় থাকলেও পুজোর সময়ের উপার্জনই হল তাদের বলভরসা। যেমন গোটা বছরধরে নানা প্রতিমার বায়না নিলেও, কুমোর চিটমাটি আর বেলেমাটিতে খড় বা পাট মিশিয়ে নিজের শিল্পদক্ষতার শীর্ষে পৌঁছাতে চান মহাপুজোর সময়। সারা বছর টুকিটাকি সেলাই করে অনলাইন আর রেডিমেডের যুগে সংসার-টানা পাড়ার দরজি ভরসা রাখেন পুজোর অর্ডারেই। এভাবেই প্যান্ডেল-ডেকরেটার, ফুটপাতের হকার, প্রসাধনবিক্রেতা, পার্লারের মালিক সকলেরই অর্থনৈতিক দুর্গতিনাশিনী যেন এই উৎসব। এমনকি যে-ছেলেটা রোজ সকালে বাড়িতে-বাড়িতে কাগজ দেয় সে-ও ভাবে একটা পুজোবার্ষিকী যদি গুঁজে দেওয়া যায় কাগজের সঙেগ, তবে পার্বণের সময়ে কিছুটা আর্থিক সুরাহা হয়।
এমনই অর্থবহ এবং অর্থ-বাহী উৎসব এ বছর না হলে কী হত তা সংবেদনশীল পাঠক অনুমান করুন। ‘নিউ নরমাল'-এ মানিয়ে নেওয়া নাগরিককুল অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করবেন, বজায় রাখবেন শারীরিক দূরত্বও, অযথা ভিড় বাড়াবেন না—এসব নিয়মকানুন অবশ্যই সবারই জানা। ইচ্ছে করলে এই লকডাউন সময়ে আরও বেশি করে মুঠোর মধ্যে ধরা ফোনটিকে ব্যবহার করে ভার্চুয়াল প্যান্ডেলে পাক খাবেন, আড্ডা মেরে নেবেন। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো ভিন্ন আর কিছু করার নেই—এটা টিকে থাকার বছর।
তাই লকডাউন সময়ে ১৪২৭ বঙ্গাব্দের শুরুতে বৈদ্যুতিন পুস্তিকার সূচনার মাধ্যমে পাঠকদের কাছে পৌঁছানোর যে প্রচেষ্টা আমরা করেছিলাম, তা থেমে থাকেনি। পাশাপাশি জুন ২০২০ মুদ্রিত সংখ্যাটি প্রকাশ না-করতে পারলেও দুর্গতিনাশিনীর আগমনে আমরা তুলে ধরতে চাইছি এই সংকটকালে শিল্পী থেকে সাধারণ মানুষের অবস্থান—বর্তমান ও অতীতচিত্রের মেলবন্ধনে।
সকলে সুস্থ থাক, ব্যাধিনাশিনীর কাছে এই আমাদের প্রার্থনা। কিন্তু হাথরাসের ঘটনার প্রেক্ষিতে মনে প্রশ্ন জাগে, এই মাতৃশক্তি বন্দনার আমরা কতটা অধিকারী!
তা সত্ত্বেও ভূতের ভয়ের মতো করোনা-ভীতিতে নিমজ্জিত আমাদের অার্থসামাজিক পরিবেশকে স্থিতাবস্থায় ফেরানোর কামনায় আসুন, ফললাভের আশায় না-হোক, বললাভের বাসনায়, ব্যাধিনাশিনীর বন্দনা করি:
রূপং দেহি
যশো দেহি...
দ্বিষো জহি
প্রকাশকাল: অক্টোবর ২০২০
প্রচ্ছদ ও শিল্প-নির্দেশনা: সোমনাথ ঘোষ
সম্পাদক: সৈকত মুখার্জি
রূপং দেহি
পার্থ দাশগুপ্ত
সনাতন দিন্দা
সুশান্ত পাল
ভবতোষ সুতার
সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায়
আশিস ঘোষ
যশো দেহি
কুমোরটুলি
শুভ্ররূপ ব্যানার্জি
আলোর অমল কমলখানি কে ফুটাবে
রজত চক্রবর্তী
করাল করোনার ছায়া শোলাপীঠ বনকাপাশিতে
রণদেব মুখোপাধ্যায়
প্রতিমার সাজ : কৃষ্ণনগরের লোকশিল্প
অমৃতাভ দে
চালচিত্র শিল্পী রেবা পাল
হরপ্পা প্রতিবেদন
করোনার রোগলক্ষণ ও কুমোরপাড়া
ভাস্কর দাস
...
দ্বিষো জহি
অতিমারির অদ্ভুত পুজো
সুধীর চক্রবর্তী
অবলুপ্ত ঠাকুরদালান ৩
দেবাশিস বসু
দুর্গা দর্শন
অমিতাভ সেনগুপ্ত
আপনি আমাডিগের কালী
বিশ্বজিৎ রায়
পুজোর বাজার এখন তখন
সুভদ্রা ঊর্মিলা মজুমদার
আমার পুজো
বর্ণালী পাইন
পুজোর বই: যৌন পত্রিকা পড়া ও দেখা
বিজলীরাজ পাত্র
পুজোর বিজ্ঞাপন ও আশ্বিনের একখানা ‘দেশ'
কৃষ্ণপ্রিয় দাশগুপ্ত
পুজোয় চাই নতুন জুতো
জয়দীপ মিত্র
পুজোর বাংলা ছবি:
কিছু ইতিহাস, কিছু স্মৃতি-বিস্মৃতি
স্পন্দন ভট্টাচার্য
শরৎ হয়ে এলে ফিরে
অপ্রতিম চক্রবর্তী
পুজোর গান ও শারদ অর্ঘ্য
অভীক চট্টোপাধ্যায়
পুজোর জলসা
সুদীপ সিংহ
লরিতে আগমন, ট্রলিতে গমন
প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত
বাঙালির বেড়ানো বাই’
সৌম্যদীপ
মা
আমার স্মৃতিতে দুর্গাপুজো
আভারাণী ঘোষ
আমার ছোটবেলায় দেখা পূজো
গৌরী সেন
বেলতলীতে কয়েকবার দুর্গোৎসব
সতী দাশগুপ্ত
অশীতিপরার দুর্গাদর্শন
কৃষ্ণা কুন্ডু
শরতের দুর্গা নয়
বসন্তের বাসন্তী আমাদের মা
নমিতা চক্রবর্তী
শারদোৎসবের সেকাল-একাল
ইরা দত্ত
ফিরে দেখা দুর্গা পুজো
প্রণতি মুখোপাধ্যায়
পুজোর পাঁচালী
শান্তা ভট্টাচার্য
স্মৃতির দুর্গাপুজা
সলিলা দাস
আমার দেখা দুর্গা পূজা
অঞ্জলি সেনগুপ্ত
ফিরে দেখা দুর্গা পুজো
গোপা দাশগুপ্ত
দুর্গোৎসব
মুক্তি রায়
ছোটবেলার দুর্গোৎসব
দীপালি বিশ্বাস
গ্রাহক হোন
হরপ্পার গ্রাহক হতে গেলে বছরে তিনটি সংখ্যার জন্য মোট পাঁচশো টাকা দিতে হয়। (ডাকমাশুল আলাদা)
যোগাযোগ করুন ই-মেলে অথবা ফোনে কথা বলুন।
সরাসরি প্রাপ্তিস্থান
• হরপ্পার পরিবেশক পশ্চিমবঙ্গে অক্ষর প্রকাশনী, ১৮এ টেমার লেন, কলকাতা-৯ ও বাংলাদেশে বাতিঘর।
• কলেজস্ট্রিটে পাতিরাম, ধ্যানবিন্দু, দেজ, দে বুকস্টোর, উল্টোডাঙায় সুনীলদার দোকান, রাসবিহারী মোড়ে কল্যাণদার দোকান, রিড বেঙ্গলি বুক স্টোর, শান্তিনিকেতনে রামকৃষ্ণর দোকানের মতো বহু স্টলে হরপ্পা নিয়মিত পাওয়া যায়। এছাড়া অনলাইনে হরপ্পা বিক্রি হয়।
• পত্রিকা পেতে আপনি দপ্তরেও মেল করতে পারেন।
বৈদ্যুতিন পুস্তিকা
করোনার আক্রমণে অন্তরীণ অবস্থায় ১ বৈশাখ ১৪২৭ থেকে ‘হরপ্পা’-র বৈদ্যুতিন পুস্তিকা প্রকাশের সূচনা। এই পুস্তিকা নিজেদের ওয়েবসাইট, সামাজিক মাধ্যম, যেমন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে পাঠকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। দেখবেন চলুন...