পঞ্চম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা
বাঙালির বাণিজ্যপ্রীতির অভাব নিয়ে চালু কথা ঘুরে বেড়ায় মুখে মুখে। কিন্তু একসময় ব্যবসায় বেশ সমৃদ্ধি ছিল এ জাতির। সামাজিক বৃত্তি, পরিষেবার বাইরেও তার পসার সামগ্রী ছড়িয়ে পড়েছিল দেশের অন্য রাজ্যে তো বটেই, দেশের বাইরে বহু দূরদেশেও। সেসব পণ্যের অৎপাদন আজ নেই, নেই বিস্তারিত বাণিজ্য। এ সংখ্যায় ‘হরপ্পা’-র পাতায় উঠে এল সেসব কথা। ...
প্রাচীনকাল থেকেই গ্রামজীবনকেন্দ্রিক বাংলা ছিল শস্যশ্যামলা স্বনির্ভর নদীমাতৃক জনপদ। গ্রামে চাষি যেমন খাদ্যশস্য উৎপাদন করত অন্যান্য বৃত্তিজীবীরা প্রয়োজনীয় অপরাপর জিনিস তৈরি করত কিংবা দিত নানান সামাজিক বৃত্তিমূলক পরিষেবা। পারস্পরিক অর্থনৈতিক বোঝাপড়ায় সমাজ-সংসার এগিয়ে চলত নিজের গতিতে। এই গ্রামব্যবস্থায় প্রস্তুত কৃষিজাত শস্য এবং শিল্পজাত সামগ্রী উদ্বৃত্তও থাকত। সেসব পণ্যের গ্রাম থেকে অন্যত্র বাণিজ্যিক আদানপ্রদানের মাধ্যমে গ্রামে তৈরি না-হওয়া বা অলভ্য বহু দরকারি সামগ্রী আসত বাইরে থেকে। যেমন কয়লা, লোহা, সোনা প্রভৃতি সর্বত্র পাওয়া যেত না, কিন্তু বহু বৃত্তিজীবীর কাজে এগুলো খুবই জরুরি। এভাবেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্যের বিপণনের মাধ্যমে প্রথমে অন্তর্বাণিজ্য ও পরে বহির্বাণিজ্যের সূচনা।
ক্রমশ বাণিজ্যই হয়ে উঠল বাঙালির ধনাগমের মূল উপায়। তাম্রলিপ্ত ছিল সেকালের অন্যতম বড়ো বন্দর। সেখান থেকে নানা দিকে জাহাজ ছাড়ত। আর এই বাণিজ্যযাত্রাকে কেন্দ্র করে অচিরেই বাঙালি নৌবিদ্যা ও সমুদ্রবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠে। বাংলার কৃষি- শিল্পজাত সামগ্রী ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমে মিশরে-রোমে, পূর্বে ও দক্ষিণে চিন-সিংহল-মালদ্বীপ ও অন্যত্র।
কিন্তু সপ্তম-অষ্টম শতকের পর নানা কারণে বাংলার বাণিজ্যে মন্দা আসে। এখানকার ব্যবসায়ীরা বিশ্ববাণিজ্যের মানচিত্রে পিছিয়ে পড়ে। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাজার দখল করতে নেমে পড়ে অন্যান্য বণিকরা। আরব দেশের ব্যবসায়ীরা ভারতবর্ষ এমনকি বাংলায়ও তাদের বাণিজ্যিক অভিযান শুরু করে। আবার তিন-চারশো বছর পর বাঙালি বণিকরা কিছুটা হলেও তাদের কর্তৃত্ব কায়েম করে বিশ্ববাজারে। খ্রিষ্টীয় চতুর্দশ শতকে বাংলায় গড়ে ওঠে চট্টগ্রাম ও সপ্তগ্রাম বন্দরের মতো বন্দর। বহু বিদেশি পর্যটকের লেখায় এ বন্দরগুলোর বর্ণনা ও বাঙালি বণিকের সমৃদ্ধির কথা পাওয়া যায়। বাংলা থেকে ধান, নারকোল, সুপুরি, তুলো, মিহি কাপড়, মসলিন, সোরা ইত্যাদি রপ্তানি হত। আর বাইরে থেকে আসত ইস্পাত ইত্যাদি প্রয়োজনীয় দ্রব্য।
বাংলার ব্যবসায়ীদের অর্থ, সম্মান, প্রতিপত্তির কথা লোকমুখে কথায়-গানে ছড়িয়ে পড়ে। সে-কথা আমরা জানতে পারি ময়মনসিংহ গীতিকা-র ‘মহুয়াপালা’য়, ‘দেওয়ান ভাবনা’য়, মানিকচাঁদের গানে, ডাক ও খনার বচনে। মঙ্গলকাব্যগুলোতে চাঁদ সওদাগরের মতো দোর্দণ্ডপ্রতাপ মহাজনদের কাহিনির মধ্যে দিয়ে সেকালে তাদের সামাজিক প্রভাব-প্রতিপত্তি চিত্রায়িত হয়েছে।
এরপর ষোড়শ শতক থেকে বাংলায় ইয়োরোপীয় বণিকরা ঢুকতে শুরু করে। সুলতানি আমলে তারা বিশেষ সুবিধা না-করতে পারলেও মোগল রাজত্বকালে নানা জায়গায় কুঠি স্থাপন করে ব্যবসা চালাতে থাকে তারা। পরে ইংরেজরা রাজানুগ্রহে বলীয়ান হয়ে পর্তুগিজ, ফরাসি, দিনেমার প্রভৃতি বিভিন্ন বণিকদের কোনঠাসা করে এদেশে একচ্ছত্র প্রাধান্য কায়েম করে। শুধু বাংলা থেকে কাঁচামাল নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে তারা ক্ষান্ত হয় না, তাদের দেশে উৎপন্ন পণ্যসামগ্রী এখানে বিক্রি করে দেশীয় ব্যবসাকে পঙ্গু করে দেয়। এভাবেই বাঙালির বাণিজ্যের গৌরবময় ইতিহাসের যবনিকাপাত ঘটে।
১৯৪৭-এ দেশ স্বাধীন হলেও বাংলায় সে ব্যবসায়িক পরিমণ্ডল আর গড়ে তোলা যায়নি। এমনকি ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে সময় যে সমস্ত স্বদেশি কোম্পানিগুলির উদ্ভব হয় সেগুলোও বেশিদিন টিকে থাকেনি স্বাধীনতার পর। চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে অতীতগৌরবময় বহু বাণিজ্য-উদ্যোগই।
ধীরে ধীরে পেছতে থাকা বাংলার বাণিজ্য আরও বিপর্যস্ত হয়েছে গত দু-বছরে করোনা-র কারণে। বিশেষত বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর সময়ে যে ব্যবসা হয় তা অনেকেরই বছরের অর্ধেক আয়ের উৎস। কিন্তু অতিমারির গ্রাসে নিমজ্জিত সময়কালে সেসুযোগ আর নেই বললেই চলে। তবুও আমরা আশাবাদী, এই অশনিকাল কেটে গেলে বাঙালির ব্যবসায় স্থিতাবস্থা দ্রুত ফিরে আসবে।
বিচিত্র শাখাপ্রশাখায় বিভক্ত বাংলার বাণিজ্য-ইতিহাসের খণ্ডাংশ এই সংখ্যায় তুলে ধরা হল। সঙ্গে বিতরিত হল ‘স্বদেশী শিল্প প্রচার সমিতি, ১নং ডালিমতলা লেন, কলিকাতা হইতে শ্রীমন্মথনাথ ভট্টাচার্য্য কর্ত্তৃক সম্পাদিত, প্রকাশিত ও ৫৯, বেলগাছিয়া রোড, “হিমানী প্রেসে” মুদ্রিত ১৩৩৮ বঙ্গাব্দের ‘স্বদেশী শিল্পের তালিকা’ দেশের কথা।
প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২২
প্রচ্ছদ ও শিল্প-নির্দেশনা: সোমনাথ ঘোষ
সম্পাদক: সৈকত মুখার্জি
অল্লহভট্টারকস্বামীর উপাসনালয়: দ্বাদশ শতকীয় বঙ্গের অভিজ্ঞতা
• রণবীর চক্রবর্তী
আশুবাবুর প্রিন্টিং প্রেস
• অর্ধেন্দু সেন
লাইনোটাইপ-পূর্ব যুগের বাঙালির বইয়ের ব্যবসা
• অগ্নিভ ঘোষ
বাঙালির ওড়িয়া বই পড়া ও ব্যবসা-কথা: মুদ্রণ সংস্কৃতির ভিতর ও বাহিরে সংস্কৃতির বোঝাপড়া
• বিজলীরাজ পাত্র
বাংলা নাটক ও ব্যবসা
• তীর্থঙ্কর চন্দ
বাজার, বাণিজ্যিকীকরণ ও বাংলা ছবি: ফিল্ম ব্যবসার লেন্সে বাংলা চলচ্চিত্রের তিনটি দশক
• স্পন্দন ভট্টাচার্য
... বাংলার জাহাজশিল্প: সেকাল, একাল ও এন্তেকাল
• ভাস্কর দাস
ঠাকুরবাড়ির ব্যবসা
• অভীককুমার দে
কলকাতার নব্য অভিজাততন্ত্র
• দেবাশিস বসু
উপনিবেশের পঁুজির বাজারে বাঙালি মেয়েরা
• ঈশিতা চক্রবর্তী
ভারতের শেফিল্ড এবং আলামোহন দাশ
• প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত
দিনেমার শ্রীরামপুর: বৃত্তি ব্যবসা বাণিজ্য
• সৌমিত্রশংকর সেনগুপ্ত
ফরাসি শহরের বাঙালি বণিক
• উৎপল চক্রবর্তী
জি সি লাহা: আধুনিক ভারতীয় শিল্পে রং-তুলির জোগানদার
• সত্যশ্রী উকিল
স্বদেশি আন্দোলন ও কয়েকটি বাঙালি শিল্পোদ্যোগ
• সৌমেন নাথ
বাঙালির বাণিজ্য ও বাদ্যযন্ত্র নির্মাণশিল্প
• কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়
লোকশিল্পে লক্ষ্মীলাভ
• দীপককুমার বড় পণ্ডা
বাংলার মিষ্টান্নশিল্প
• হরিপদ ভৌমিক
মুর্শিদাবাদের শিল্পবাণিজ্য
• প্রকাশ দাস বিশ্বাস
কলকাতার গহনার ব্যবসা ও সরকার এন্ড সন্স
• হরপ্পা প্রতিবেদন
দে’জ মেডিকাল
• হরপ্পা প্রতিবেদন
ওষুধ ব্যবসা ও লঘু পুঁজিবাদ
• প্রজিতবিহারী মুখোপাধ্যায়
বস্ত্র ব্যবসায়ে বাঙালি
• সৈকত মুখার্জি
গ্রাহক হোন
হরপ্পার গ্রাহক হতে গেলে দুটি সংখ্যার জন্য মোট সাতশো টাকা দিতে হয়। (অতিরিক্ত ডাকমাশুল লাগবে না)
যোগাযোগ করুন ই-মেলে অথবা ফোনে কথা বলুন।
সরাসরি প্রাপ্তিস্থান
• হরপ্পার পরিবেশক পশ্চিমবঙ্গে অক্ষর প্রকাশনী, ১৮এ টেমার লেন, কলকাতা-৯ ও বাংলাদেশে বাতিঘর।
• কলেজস্ট্রিটে পাতিরাম, ধ্যানবিন্দু, দেজ, দে বুকস্টোর, উল্টোডাঙায় সুনীলদার দোকান, রাসবিহারী মোড়ে কল্যাণদার দোকান, রিড বেঙ্গলি বুক স্টোর, শান্তিনিকেতনে রামকৃষ্ণর দোকানের মতো বহু স্টলে হরপ্পা নিয়মিত পাওয়া যায়। এছাড়া অনলাইনে হরপ্পা বিক্রি হয়।
• পত্রিকা পেতে আপনি দপ্তরেও মেল করতে পারেন।
বৈদ্যুতিন পুস্তিকা
করোনার আক্রমণে অন্তরীণ অবস্থায় ১ বৈশাখ ১৪২৭ থেকে ‘হরপ্পা’-র বৈদ্যুতিন পুস্তিকা প্রকাশের সূচনা। এই পুস্তিকা নিজেদের ওয়েবসাইট, সামাজিক মাধ্যম, যেমন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে পাঠকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। দেখবেন চলুন...