মানবপুত্র
২৮ মে, ২০২১
জিশুর জন্মের দিন, এমনকি জন্মের সাল নিয়ে প্রতর্ক রয়েছে। বড়োদিন জিশুর জন্মদিন নয়। যদি প্যালেস্টাইনে জিশু সত্যিই ভূমিষ্ঠ হয়ে থাকেন, এবং যদি পঁচিশে ডিসেম্বরের রাতেই তা হয়ে থাকে, তাহলে তো অঙ্কের একটা দিক মেলে না। মেষপালকদের মধ্যে তাঁর জন্ম কথিত আছে, অথচ জুডেয়ার শীতের রাতে তারা মাঠে কেন থাকবে প্রতীক্ষারত? হিসেব মেলে না। উত্তর খুঁজতে চাইলেন অপ্রতিম চক্রবর্তী ’হরপ্পা’ প্রকাশিত ‘মানবপুত্র’ পুস্তিকাটিতে। ...
বড়োদিন জিশুর জন্মদিন নয়। যদি প্যালেস্টাইনে জিশু সত্যিই ভূমিষ্ঠ হয়ে থাকেন, এবং যদি পঁচিশে ডিসেম্বরের রাতেই তা হয়ে থাকে, তাহলে তো অঙ্কের একটা দিক মেলে না। মেষপালকদের মধ্যে তাঁর জন্ম কথিত আছে, অথচ জুডেয়ার শীতের রাতে তারা মাঠে কেন থাকবে প্রতীক্ষারত? হিসেব মেলে না। উত্তর চাইলে আইসিস আর প্রসূনসভ্যতার দিকে চাইতে হবে। আইসিসের ছেলে ইউলের উপাসক ছিল মিশরীয়রা, আর ব্যাবিলনের সূর্যদেবতা ‘তাম্মুসের’ আরাধনায় পেগানদের প্রায় সমস্ত আচার-পরম্পরা রপ্ত করেছিল প্রাচীন খ্রিস্টধর্ম। পাইন গাছের গায়ে মোমবাতির আলো আর খেজুরপাতায় প্রদীপ দেওয়া তাই একই কাজ। জিশুর জন্মের দিন, এমনকি জন্মের সাল নিয়ে প্রতর্ক রয়েছে। চতুর্থ শতকের আগে অবধি পঁচিশে ডিসেম্বর তারিখটির আলাদা কোনো মাহাত্ম্য জানা ছিল না বলে অনেকের মত। বরং আরও দুই শতাব্দী লেগেছে এটিকে উৎসবের দিনে পর্যবসিত করতে। তবে শেষ ডিসেম্বরে সূর্যদেবতার আরাধনায় মেতে উঠত বহু প্রাচীন সভ্যতাই, সে ছিল শীতের মৃত্যুহিম আবরণ সরিয়ে বসন্তের আগমনী গীত। ‘উইন্টার সলস্টাইস’ তাই ছিল আলোয় ফেরার উৎসব। যত দিন গেছে, উৎসব হয়েছে আরও বিস্তৃত। খ্রিস্টধর্ম যখন বিস্তার লাভ করেছে পেগান সংস্কৃতিতে তখন এই দুই উৎসব মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। ৩৩৬ অব্দের পূর্বে রোমে বড়োদিন উদযাপনের কোনো নির্দিষ্ট বিবরণ পাওয়া যায়নি। অন্য দিকে প্রাচ্যে ৬ জানুয়ারি দিনটিকে জিশুখ্রিস্টের জন্মের সঙ্গে, আরও সঠিক ভাবে বললে তাঁর ব্যাপ্টিজমের সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করা হোত। কোথাও আবার ২৮ মার্চ তারিখটিকে জিশুর জন্মদিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবু পঁচিশে ডিসেম্বর তারিখটিই রয়ে গেল। এর একটি ‘বড়ো’ কারণ সম্ভবত এই যে রোমান ক্যালেন্ডার মতে ওই দিনটিই উইন্টার সলস্টাইস (যদিও কোনো তারিখেই নেই ইতিহাস-পূর্ব কোনো প্রশ্নাতীত দিকচিহ্ন। রোমান ক্যালেন্ডারের শেষ পর্বে তাই Years of confusion-কে অতীতে পর্যবসিত করে খ্রিস্টপূর্ব ৪৫ অব্দে জুলিয়াস সিজার প্রচলন করলেন যে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার, সেখানেও ২৫ ডিসেম্বরকে ‘উইন্টার সলস্টাইস’ রূপে নির্দিষ্ট করতে করতে কেটে গেছে এক শতাব্দীকাল। আবার এই সৌর ক্যালেন্ডারের সংশোধন করে ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরির হাতে জন্ম নিল কাল-গণনার নতুন পদ্ধতি— গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার, যার সঙ্গে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের ব্যবধান ১৪ দিনের। এখনও Orthodox Church গুলি বড়োদিন পালন করে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে।)
তবে, চতুর্থ শতকে সেন্ট আগাস্টাইন ২৫ ডিসেম্বরেই জিশুখ্রিস্টের জন্মদিনের সম্ভাব্যতাকে মান্যতা দিয়েছেন। “Hence it is that He was born on the day which is the shortest in our earthly reckoning and from which subsequent days begin to increase in length. He, therefore, who bent low and lifted us up chose the shortest day, yet the one whence light begins to increase.”
সূর্যদেবতার সঙ্গে জিশুখ্রিস্টের এই সংযোগের সমর্থনে মেলে বাইবেলের বিভিন্ন পংক্তিতে। তাঁকে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে “Sun of righteousness” রূপে।
আবার গুচ্ছ গুচ্ছ ভাইকিং ভ্যান্ডালরা নবান্নে ‘ইস্ত্রুর’ পুজো করছে। বরফ গলে গেলে তাদের ছোটো-বড়ো খামারে নতুন গম-বার্লি উঠেছে। প্রথম খ্রিস্টান মিশনারিরা দেখল রেজারেকশন ব্যাপারটা হেদেনদের জানাতে হবে, অথচ এমনভাবে যে তাদের নিজস্ব পরবটাও যেন বজায় থাকে। জন্ম নিল ‘ইস্টার’। আবার অন্যমতে দেখলেও ‘ইস্টার’ এসেছে ‘ইশতার’ থেকে। ইনিই নানা রূপে মিশরে আর্টেমিস, রোমে ভিনাস, গ্রিসে ডায়ানা, আরও কত কী!’
প্রকাশকাল: ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০
লিখন: অপ্রতিম চক্রবর্তী
প্রচ্ছদ: সৌম্যদীপ
শিল্প-নির্দেশনা: সোমনাথ ঘোষ
সম্পাদক: সৈকত মুখার্জি
গ্রাহক হোন
হরপ্পার গ্রাহক হতে গেলে বছরে তিনটি সংখ্যার জন্য মোট পাঁচশো টাকা দিতে হয়। (ডাকমাশুল আলাদা)
যোগাযোগ করুন ই-মেলে অথবা ফোনে কথা বলুন।
সরাসরি প্রাপ্তিস্থান
• হরপ্পার পরিবেশক পশ্চিমবঙ্গে অক্ষর প্রকাশনী, ১৮এ টেমার লেন, কলকাতা-৯ ও বাংলাদেশে বাতিঘর।
• কলেজস্ট্রিটে পাতিরাম, ধ্যানবিন্দু, দেজ, দে বুকস্টোর, উল্টোডাঙায়
সুনীলদার দোকান, রাসবিহারী মোড়ে কল্যাণদার দোকান, রিড বেঙ্গলি বুক স্টোর, শান্তিনিকেতনে রামকৃষ্ণর দোকানের মতো বহু স্টলে হরপ্পা নিয়মিত পাওয়া যায়। এছাড়া অনলাইনে হরপ্পা বিক্রি হয়।
• পত্রিকা পেতে আপনি দপ্তরেও মেল করতে
পারেন।
মুদ্রিত সংখ্যা
হরপ্পার যাত্রা শুরু ২০১৭-র অক্টোবর মাসে চতুর্মাসিক পত্রিকা হরপ্পা লিখন চিত্রণ-এর প্রকাশলগ্নে। মূলত সাহিত্য পত্রিকা হিসেবে হরপ্পা আত্মপ্রকাশ করে বাংলার
শিল্পসংস্কৃতি আচার অনুষ্ঠান রীতিনীতি পালাপার্বণ প্রভৃতি নানা বিষয়কে দু-মলাটের ভিতর নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরার লক্ষ্যে। দেখবেন চলুন...