মহিষাসুর
৫ অক্টোবর, ২০২২
মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এর ৮২ তম অংশের শুরুতে বলা হয়েছে দেবতা ও অসুরের শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধ চলেছিল অসুরপতি মহিষাসুরের নেতৃত্বে৷ কিন্তু কে এই মহিষাসুর, কী তার পরিচয়, কী-বা লেখা আছে তাকে নিয়ে পুরাণে, ইতিহাসে, ধর্মগ্রন্থে, পণ্ডিতদের নানান লিখনে ও আলোচনায়—এই নিয়ে হরপ্পার এই পুস্তিকা ‘মহিষাসুর’ ‘হরপ্পা লিখন চিত্রণ’ পত্রিকার শারদ সংখ্যা অক্টোবর ২০১৯ সংখ্যায় প্রকাশিত প্রবন্ধ ‘মহিষাসুর’-এর পরিমার্জিত, পরিবর্ধিত ই-বুক সংস্করণ।। ...
মহিষাসুরকে নিয়ে লিখতে বসে প্রথম মাথায় আসছে গৌতম বুদ্ধকে বিষ্ণুর অবতার বানানোর কাহিনিটি, সেখানে অসুরদের কথা আছে৷
পুরা দেবাসুরে যুদ্ধে দৈত্যৈর্দেবাঃ পরাজিতাঃ৷৷
রক্ষ রক্ষেতি বদন্তো জগ্মুরীশ্বরম্৷
মায়ামোহস্বরূপোহসৌ শুদ্ধোদনসুতোভবৎ৷
মোহয়ামাস দৈত্যাংস্তাংস্ত্যজিতা বেদধর্মকম্৷৷
তে চ বৌদ্ধাঃ বভুবুর্হি তেভ্যোন্যে বেদবর্জিতাঃ৷
আর্হতঃ সোভবৎ পশ্চাদর্হতান করোৎ পরান্
এবং পাষণ্ডিনো জাতা বেদধর্মবিবর্জিতাঃ৷৷
—অগ্নিপুরাণ ১৬৷১-৪
পুরাকালে দেবাসুর যুদ্ধে দৈত্যগণের দ্বারা দেবগণ পরাজিত হলেন৷ তাঁরা বিষ্ণুর কাছে ‘রক্ষা করো রক্ষা করো’ বলে স্মরণ নিলেন৷ বিষ্ণু শুদ্ধোদনের পুত্র হলেন৷ তিনি দৈত্যদের মোহিত করলেন৷ তারা বেদ ধর্ম পরিত্যাগ করে বৌদ্ধ হল৷ তাদের মধ্যে অন্যরাও বেদ বর্জিত হল৷ তিনি আর্হত হলেন এবং পরে সকলকে আর্হিত করলেন৷ এইরূপে পাষণ্ডগণ বেদধর্মবর্জিত হয়েছিল৷
হিন্দুদের দেবদেবী: উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ গ্রন্থে হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য দ্বিতীয় পর্বের ৩৬৩ পৃষ্ঠায় লিখছেন—
“এই বুদ্ধদেব দানবদের বেদধর্মবিবর্জিত করায় দেবগণের অসুরবিজয় সহজসাধ্য হয়েছিল৷ সারদাতিলক তন্ত্রে দশাবতার স্তোত্রে বুদ্ধবন্দনায় বলা হয়েছে—
পুরা সুরানামসুরানবিজেতু সম্ভবয়নচীবরচিহ্৷
চকার যঃ শাস্ত্রমমোঘকল্পং তং মূলভূতং প্রণতোস্মি বুদ্ধম্৷৷
পুরাকালে দেবতাদের অসুরবিজয় সম্ভব করতে যিনি চীবর পরিধান করেছিলেন সেই মূল কারণ বুদ্ধকে প্রণাম করি৷”
এই উদাহরণ থেকে পরিষ্কার বোঝা যাবে আমাদের পুরাণ বা ইতিহাস লেখার পদ্ধতি৷ বুদ্ধকে অন্তত আমরা পাথুরে প্রমাণে মোটামুটিভাবে সময় নির্দেশ করে হিস্ট্রি অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছি৷ এই পুরাণকাহিনির সঙ্গে ইতবৃত্ত বা হিস্ট্রির তুলনা করলেই বোঝা যাবে যাবতীয় পক্ষাবলম্বন তত্ত্ব৷ গিরীন্দ্রশেখর বসু বলেছিলেন, “নব্য ইতবৃত্তকারগণ অনেক ক্ষেত্রেই নিজ নিজ বুদ্ধি ও কল্পনা আশ্রয় করিয়া ঘটনাবলী ব্যাখ্যা করেন৷ তাতে ইতবৃত্ত পক্ষপাতদুষ্ট হইবার সম্ভাবনা, মূল বিবরণও সাধারণের অনধিগম্য থাকিয়া যায়৷ অপরপক্ষে হিন্দু পৌরাণিক সূক্তোক্ত ঘটনা লিপিবদ্ধ করেন মাত্র, তিনি তা ব্যাখ্যা করিবার চেষ্টা করেন না৷ অনেক সময় একই ঘটনার পরস্পর বিরোধী বিবরণ পুরাণকার লিপিবদ্ধ করিয়াছেন৷ কিন্তু নিজ বুদ্ধি ও কল্পনা সাহায্যে সত্যোদ্ধারের কোনও চেষ্টা করেন নাই৷ এসকল ক্ষেত্রে পুরাণব্যাখ্যাকার সত্যনির্ণয়ের চেষ্টা করিবেন৷ পুরাণকার ও পুরাণব্যাখ্যাকার এর অধিকার ভিন্ন হওয়ায় ইতবৃত্তীয় উপাত্ত বা (History) সকল সময়েই জনসাধারনের অধিগম্য৷ এ বিষয়ে পৌরাণিক পদ্ধতি আধুনিক ইতিবৃত্তকারের পদ্ধতি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ৷”
অতএব জনসাধারণের অংশ হিসেবে তাঁর নির্দেশিত পদ্ধতি অনুসরণ করে পুরাণ ব্যাখ্যা করবার অধিকার আমার রয়েছে৷ অগ্নিপুরাণ থেকে সাধারণ বাঙালির অন্তত এটুকু বোঝা উচিত যে সে বেদধর্মবর্জিত অসুর পর্যায়ভুক্ত এবং বুদ্ধ অহিংসার বাণী প্রচার করে তাদের অহিংসাব্রতী করেন এবং দেবগণ মওকা বুঝে তাদের নেতৃবৃন্দকে বিনাশ করেন৷ ভবিষ্যপুরাণে যিশু, মহম্মদ, রানি এলিজাবেথ সবার কথাই আছে শুনেছি, থাকাই স্বাভাবিক কারণ ভারতীয় ইতিহাস (History) লিখন বা বর্ণন পদ্ধতির নামই পুরাণ, যা গিরীন্দ্রশেখর বসু অব্যর্থভাবে ব্যক্ত করেছেন৷ বুদ্ধ অবতার-এর পুরাণকাহিনি ও প্রামাণ্য ইতিহাসের তুলনামূলক আলোচনায় আমরা ভারতীয় পুরাণ-ইতিহাস লেখার পদ্ধতিটিকে বুঝে নিয়ে যদি তার আগের পুরাণকাহিনিগুলিকে বিশ্লেষণ করি, তাহলে প্রকৃত ইতবৃত্ত বা হিস্টরিক্যাল ঘটনাগুলির গতিপ্রকৃতি বেশ কিছুটা বুঝতে পারা যায়৷ আর এই পদ্ধতিতে ধর্মীয়, বৈদিক বা দৈবিক খোলস ছাড়ালে দেব ও অসুর জাতির দ্বন্দ্বের কারণ পরিষ্কার বোঝা যাবে৷ ...
প্রকাশকাল: ৫ অক্টোবর, ২০২২
লিখন ও প্রচ্ছদ: সৌম্যদীপ
অলংকরণ ও শিল্প-নির্দেশনা: সোমনাথ ঘোষ
সম্পাদক: সৈকত মুখার্জি
অঙ্কন: পার্থ দাশগুপ্ত
গ্রাহক হোন
হরপ্পার গ্রাহক হতে গেলে বছরে তিনটি সংখ্যার জন্য মোট পাঁচশো টাকা দিতে হয়। (ডাকমাশুল আলাদা)
যোগাযোগ করুন ই-মেলে অথবা ফোনে কথা বলুন।
সরাসরি প্রাপ্তিস্থান
• হরপ্পার পরিবেশক পশ্চিমবঙ্গে অক্ষর প্রকাশনী, ১৮এ টেমার লেন, কলকাতা-৯ ও বাংলাদেশে বাতিঘর।
• কলেজস্ট্রিটে পাতিরাম, ধ্যানবিন্দু, দেজ, দে বুকস্টোর, উল্টোডাঙায়
সুনীলদার দোকান, রাসবিহারী মোড়ে কল্যাণদার দোকান, রিড বেঙ্গলি বুক স্টোর, শান্তিনিকেতনে রামকৃষ্ণর দোকানের মতো বহু স্টলে হরপ্পা নিয়মিত পাওয়া যায়। এছাড়া অনলাইনে হরপ্পা বিক্রি হয়।
• পত্রিকা পেতে আপনি দপ্তরেও মেল করতে
পারেন।
মুদ্রিত সংখ্যা
হরপ্পার যাত্রা শুরু ২০১৭-র অক্টোবর মাসে চতুর্মাসিক পত্রিকা হরপ্পা লিখন চিত্রণ-এর প্রকাশলগ্নে। মূলত সাহিত্য পত্রিকা হিসেবে হরপ্পা আত্মপ্রকাশ করে বাংলার
শিল্পসংস্কৃতি আচার অনুষ্ঠান রীতিনীতি পালাপার্বণ প্রভৃতি নানা বিষয়কে দু-মলাটের ভিতর নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরার লক্ষ্যে। দেখবেন চলুন...